বাঘা শাহী মসজিদ
বাঘা উত্তর বঙ্গের এক প্রাচীনতম নগরী।ইতিহাস পর্যালোচনা এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়।পদ্মার উপকূলবর্তী এই প্রাচীন নগরীতে রয়েছে ঐতিহাসিক ‘‘ শাহী মসজিদ ’’ যার শিলালিপি,কারুকাজ ভ্রমনপ্রেমী মানুষদের আকৃষ্ট করে।বহুযুগ ধরে স্থানটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।দলিল দসত্মাবেজ থেকে জানা যায় ১৫২৩-১৫২৪ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরী ৯৩০) হোসেন শাহ এর পুত্র নুসরাত শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন।মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৬ ফুট।কালো পাথরের ০৪ টি থামের উপর মসজিদটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।যার ছাদে আছে ০৪টি গম্ভুজ,পশ্চিম দেয়ালে ০২টি বড় এবং ০১টি ছোট মেহরাব।মসজিদের ভিতর ও বাহির দেয়ালে আরবীয় কারুকার্য খচিত ইট পাথর দ্বারা সুসজ্জিত।যার প্রতিকৃতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর পঞ্চাশ টাকার নোটে শোভা পাচ্ছে।মসজিদের গাঁ ঘেষে উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে বিশাল এক দীঘি।যা মসজিদটির সমমাময়িক।দীঘির দৈর্ঘ্য .... মাইল এবং প্রস্থ ৬০০ ফুট।দীঘির পানি খুবই স্বচ্ছ এবং এর চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি দ্বারা সুসজ্জিত।শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বহু অতিথি পাখি এই দীঘিতে ভীড় জমায়।যার মনোরম দৃশ্য এবং মসজিদের স্বকীয় প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ও এর কারুকাজ ভ্রমনপ্রেমী মানুষদের পাথেয় হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।এখানে আরও আছে অসংখ্য শাহ সুফীদের পবিত্র কবর এবং মাজার শরীফ।
হাজার বছরের পূরাকীর্তি ও মুসলিম স্থাপত্বের নিদর্শন দিয়ে সাজানো জাদুঘর।বাঘার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদওবিশাল দীঘিকে ঘিরে আগত দর্শনার্থীদের পর্যটন সুবিধাবৃদ্ধি সহ অতীতের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বাঘার বিশাল দীঘির পশ্চিম পাড়েও হযরত শাহ আব্দুল হামিদদানি মন্দ(রহঃ)’র মাজারের উত্তর পার্শ্বে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২০১১সালের জুনমাসে ৬২ লাখ টাকা ব্যয়েএই জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।যার নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসে।জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জন প্রতিটিকেটর দাম পনের টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা।মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশ মুল্যে নির্ধারন করাহয়েছে ৫ টাকা। সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য পঞ্চাশ টাকা এবংঅন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা ।গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১ টাথেকে ১.৩০পর্যন্ত আধঘণ্টার জন্যে বন্ধথাকে।আর শীতকালে সকাল ৯ টাথেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।শীতকালেও দুপুর ১ টা থেকে ১.৩০পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আরসব সময়ের জন্যেই শুক্র বারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়েবারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবারবেলা ২.০০থেকে খোলাথাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে জাদুঘর খোলা থাকে।
প্রগতী পার্ক
রাজশাহী জেলাধীন বাঘা উপজেলায় অবস্থিত প্রগতী পার্কের যাত্রা শুরু । ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের খাঁয়েরহাট গ্রামের মোঃ জলিল মন্ডল প্রগতী পার্ক গড়ে তোলান । পার্কের ভেতরে একটি পুকুরের লেক ছাড়াও দর্শনার্থীদের পানিতে চলাচলের জন্য নৌকা রয়েছে। পার্কের সমস্ত এলাকা জুড়ে ফুলের বাগানের সঙ্গে রয়েছে কৃত্রিম উপায়ে তৈরিকৃত বিভিন্ন জীবজন্তু। শিশুদের বিনোদনের জন্য নগরদোলা, দোলনাসহ বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা। সভা-সমাবেশ, কনসার্ট ও গানবাজনার জন্য আন্তর্জাতিক মানের মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে।পার্কে প্রবেশ মূল্য জন প্রতি ২০ (বিশ) টাকা এবং এটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । এছাড়া এখানে বিভিন্ন জাতীয় উৎসব ও বিভিন্ন দিবস গুলো পালন হয়ে থাকে।
বাঘা উপজেলার ১৩ কিমি উত্তরে আড়ানীতে আছে ক্ষ্যাপা বাবার আশ্রম । খ্যাপা বাবা বা চটা বাবা এই আড়ানী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা। এই আশ্রমে এক সময় অনাথ – আতুর, ভক্ত-বৈষ্মব, ষাদ-সন্ন্যাসী, আউলিয়া,দরবেশ, ফকির অতিথি অভ্যাগত সকলেই আশ্রয় পেতেন এবং প্রসাদ পেয়ে ধন্য হতেন। আশ্রমে মন্দির সংলগ্ন একটি নিম গাছ আছে এবং একটি বেল গাছ দুই বন্ধুর মত দাড়িয়েঁ অছে। আশ্রমের পূর্বদিকে আম-কাঁঠালের বাগান, পশ্চিমদিকে কয়েকটি নরিকেলের গাছ, উত্তরে হলদার পাড়া।পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদী। আড়ানী হাটের উত্তর পাশেই বারোয়ারী কালীবাড়ী। ঐতিহ্যমন্ডিত এই কালী বাড়ীতে প্রতি বছর ভাদ্র মাসে তিন দিন ধরে মহা সমারোহে কালীপূজোর উৎসব হয় । এই উৎসবে যাত্রা, কবিগান এবং অন্যান্য নানা অন্যান্য নান অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে। ভাবুকেরা অসে ভাবের দুনিয়া । নিয়ে যায় ভবের মাধুরিমা। ভক্তেরা আসে ভক্তির চানে, তারা জানে অনিরুদ্ধ অগ্রহের মানে। এখানে এই আড়ানীতেই খ্যাপা বাবার আর্বিভাব । এই আশ্রমে বাঘা উপজেলা থেকে অটো রিকসা যোগে আশ্রমে আসা যায় । অথবা ট্রেন ঈশ্বরদী জংশন হইতে রাজশাহী রেল লাইনের আড়ানী স্টেশনের দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে বড়াল নদীর তীরে অবস্থিত।
উৎসব পার্ক
রাজশাহী জেলাধীন বাঘা উপজেলায় অবস্থিত উৎসব পার্ক । ব্যক্তিগত উদ্যোগে উৎসব পার্ক গড়ে উঠেছে । চার দিকে সবুজে ঘেরা বনানী।মেঠো পথ ছুঁয়ে আমবাগান আর পুকুর পাড়ে ঘেঁষে হালকা রোদের আলতো ছায়ায় চলছে কুঝিক ঝিক রেলগাড়ি।আকাশের ঠিকানায় থেমে থেমে গাল ফুলানো ধোঁয়া ছেড়ে রঙ বেরঙের বগি নিয়ে ইঞ্জিন ছুটছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।হ্যাঁ, ক্ষণিকের জন্য হলেও এমন ভ্রমণের কথা মনের ভেলায় ভাসলে শিহরণ জাগবেই। আর এমন আনন্দেই পুলকিত হচ্ছে রাজশাহীর প্রত্যন্ত বাঘা উপজেলার মানুষ।গ্রামীণ পরিবেশে শহুরে অনুভূতির পরশ বুলিয়ে দিতে উদ্বোধন করা হয়েছে বিনোদনের নতুন ঠিকানা' উৎসবপার্ক'।পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি উপজেলার বাজুবাঘা নতুন পাড়া গ্রামে চালু হওয়া পার্কের উদ্বোধন করেছেন।প্রত্যন্ত উপজেলার গ্রামীণ মানুষদের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে এপার্ক।বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মনে আনন্দের জোয়ার বয়েযাচ্ছে পার্কটিকে ঘিরে।তাই এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকছে।বিশেষ করে শিশুদের কথা লতেই হয়।যেন নতুন কোনো উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে তারা।বাইরে থেকেও দেখতে আসছে অনেকে।ট্রেন ছাড়া ও পার্কটিতে ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে দোলনা ও ঘূর্ণিসহবি ভিন্ন রাইডস।রয়েছে বনের রাজা সিংহ,রয়েল বেঙ্গলটাইগার, হাতি ওভল্লুকের ভাস্কর্য।এগুলোর ওপরে উঠে বা নেড়েচেড়ে ভিন্ন মাত্রার আনন্দ উপভোগ করছে শিশুরা।এঅঞ্চলের মানুষের বিনোদন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ৮০বিঘা জমির ওপর বেসরকারি উদ্যোগে পার্কটি নির্মাণ করেছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আজিজুলআলম।পৃথিবী জুড়ে বিনোদনের মুখ্য কেন্দ্র হিসেবে পার্কের কোনো বিকল্প নেই।তাই এপার্কটি পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ ঘটানোসহ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে একদিন বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।পার্কটি সকাল৯ টাথেকে সন্ধ্যা৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকছে।প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে২০টাকা ।রাইডস উপভোগ করার জন্য একই মূল্যের টিকিট রয়েছে।এছাড়া পার্কের মধ্যে উন্নত বিভিন্ন কোম্পানির আইসক্রিম, ফুচকা, চটপটি,ঝাল-মুড়িসহ রয়েছে মুখরোচক নানা খাবারের সমাহার।বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব জেনারেটর এবং নিরাপত্তার জন্য আনসার ও নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে।উৎসব পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল আলম বলেন, পদ্মার চরে ও বাঘার দীঘির পাড়ে কিছু শিক্ষার্থীকে পিকনিক করতে দেখেতার মনে পার্ক ও রিসোর্ট সেন্টার স্থাপনের চিন্তা আসে।পরে রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেন এবং সবদিক বিবেচনা করে উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার উত্তরে নিজ উপজেলার বাজু বাঘায় ৮০ বিঘা জমিতে পার্কটি নির্মাণ করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস